Skip to main content

এক টাকা সমাচার


ছোটবেলায় পড়ে এসেছিলাম শায়েস্তা খাঁর আমলে এক টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেতো। তাঁর সাথে আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে গর্বের সাথে পাদটীকা দেওয়া ছিলঃ ইহা তবে নিশ্চয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেওক্রাডং! এই ভ্রান্তি অনেকেরই আছে এবং বাজারে যেয়ে দেখি অনেক কেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে এবং মনে মনে বলতে, "সোনার বাংলার একি হাল!"
সমস্যা হল, প্রাক-ব্রিটিশ বাংলা স্বর্গভুমি ছিল-এমন ধারণা ঐতিহাসিক উপাদানের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমানিত হয় না। মূলত একটি প্রতিনিধিস্থানীয় প্রাক শিল্প সমাজ ছিল বাংলা এবং এর অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল ভঙ্গুর এবং প্রকৃতির খামখেয়ালীর কাছে অসহায়। সময়ে সময়ে এ দেশে দুর্ভিক্ষ এসেছে এবং প্রকৃতপক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্যের গভীর গহ্বর ছিল। দাস প্রথা ছিল খুবই সাধারণ একটি ব্যপার। দাসের মূল্য সংযুক্ত দলিল ঘাঁটলে বোঝা যায়, এ দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও ছিল খুবই সীমিত। সাধারণ মানুষ লেনদেন করতো কড়িতে আর খাজনা দিতে হত স্বর্ণ মুদ্রার হিসাবে। বাংলায় সস্তা দাম নিয়ে যে কিংবদন্তী রয়েছে তা দ্রব্য বা সেবার অতি সরবারহের কারণে হয় নি বরং দ্রব্যমূল্যের স্বল্পতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এই জন্য সে সময়ের অর্থনীতিকে বলা হতো খোরাকি অর্থনীতি। অনাহারে, দুর্ভিক্ষে, রোগে এতো বেশি মানুষ মারা যেতো যে, অতীত বাংলায় জনসংখ্যা খুব বেশি বাড়তো না। অমর্ত্য সেন যথার্থই বলেন যে, অর্থনীতিতে বাজারে বস্তা ভরা চাল মানে এই নয় যে দেশের সব মানুষ খুব ভাল আছে আবার বাম্পার ফলন মানে এই নয় যে, দেশে কোনো খাদ্যাভাব নেই। বাজারে চাল থাকলেই হবে না, সেটি কেনার সামর্থ্য থাকতে হবে, অধিকার থাকতে হবে। এটাই স্বত্বাধিকার।
অন্য দেশের সাথে তুলনা করবো না, তবে গত ৪০০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে যেটি বের হবে তা হল, সোনার বাংলা যদি কোন কালে থেকে থাকে তবে তা এই ২০১৮ এর খোদ বাংলাদেশেই। আমাকে দালাল বলে গালি দিয়ে লাভ নেই। আপেক্ষিকতা খুবই বাজে! পিরিয়ড।

দোহাইঃ
১. আকবর আলি খানঃ Discovery of Bangladesh, ১৯৯৬।
২ শউকত হোসেন মাসুমঃ শায়েস্তা খানের এক টাকা, ২০১৫।
৩. ঐতিহাসিকের নোটবুকঃ সিরাজুল ইসলাম, ২০১০

Comments

Popular posts from this blog

স্বার্থ

অখিল ভুবনে নীতি বলিয়া কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই। যাহার অস্তিত্ব বিরাজমান তাহা হইল স্বার্থ। ইহা সত্ত্বেও কিছু সংখ্যালঘিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ নীতি নামক অপদার্থকে গলাধঃকরণ করিয়া ধ্বংস ও অস্তিত্তের দোলনায় পেন্ডুলামের মতো দুলিতে পছন্দ করিয়া থাকেন বলিয়া বোধ করি। আর বাকি রইল যাহারা, তাহাঁরা স্বার্থ নামক পদার্থকে গ্রহণ করিয়া নশ্বরতাকে আপন দুয়ারে আমন্ত্রণ করিয়া থাকেন। দুঃখজনক হইলেও ইহা সত্য যে মানব সন্তান ভুলিয়া যায়, দৈহিক মৃত্যুর পূর্বেই আত্মা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিয়া থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে একাধিক বার করিয়া থাকে। পার্থক্য হইল এই যে, শারীরিক ভাবে মরিলে দেখিতে হয় না দেহে কেমন করিয়া পচন ধরিতেছে। তবে আত্মার পচন শুধু দেখিলেই চলে না, উপভোগও করিতে হয় বটে।

সিক্স ডিগ্রিস অফ সেপারেসন

"১৯২৯ সালে ফির্গিস কারিন্থি নামক হাঙ্গেরিয়ান এক সাহিত্যিক "চেইন" বা শিকল নামে কিছুসংখ্যক ছোট গল্প নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। গল্পের নামকরণ হয় ওই বইয়েরই শিকল নামক একটি গল্পের নামকরণ অনুসারে। ওই গল্পে কারিন্থি প্রথম conceive বা কল্পনা করেন যে তখনকার পৃথিবীর ১৫০ কোটি মানুষের মধ্য থেকে যেকোন দুজন মানুষকে রেন্ডমলি পছন্দ করলে তাদের মাঝে সর্বোচ্চ ছয়জনের বন্ধুত্বের একটি শিকল তৈরী করে ওই দুইজনকে সংযুক্ত করা সম্ভব। এটাকে ইংরেজিতে বলে "সিক্স ডিগ্রীস অফ সেপারেশন"। এরপর ১৯৬৭ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্ট্যানলি মিলগ্রাম এক যুগান্তকারী এক্সপেরিমেন্ট করে "সিক্স ডিগ্রীস অফ সেপারেশন" তত্বের একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রদান করেন। মিলগ্রামের এক্সপেরিমেন্টের উদ্যেশ্য ছিল দুইজন মার্কিন নাগরিকের মাঝে ন্যূনতম দূরত্ব জানা। শুরুতেই উনি একজন টার্গেট মানুষ ঠিক করে ৫০০ মানুষ টেলিফোন বুক থেকে রেন্ডমলি পছন্দ করে সবার নামে একটি করে পোস্টকার্ড পাঠালেন। পোস্টকার্ডে ইন্সট্রাকশন ছিল "আপনি যদি টার্গেট ব্যক্তিকে সরাসরি চিনেন তাহলে উনার কাছে ...

The Prince Charming

So, let's talk about Mr. Prince Charming. রাজকুমারীর রুপকথার গল্প গুলো পড়লে একটা বিষয় সব সময় ফুটে ওঠে তা হলো প্রত্যেকটা গল্পে একজন সুপুরুষ যুবরাজ থাকবে যে রাজকুমারীকে সমূহ বিপদের হাত থেকে বাঁচাবে এবং they will end up living happily forever! খুব ছোট বেলায় এই গল্প গুলো বাচ্চাদের মনে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় আর কোন কারণে নয়, লিঙ্গ পরিচয়কে সমাজের প্রচলিত কাঠামোর আদলে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য। এর ইমপ্যাক্টটা হয় খুব মজার। প্রত্যেকটা ছেলে প্রেমে পড়লে সে মনে করে, তার ভালোবাসার মানুষটি প্রচ ণ্ড কষ্টে আছে এবং তাকে যে করেই হোক তার রাজকুমারীকে উদ্ধার করতে হবে। মেয়েরা সাধারণত এ ধরণের আবেগের প্রতি এক ধরণের পাল্টা আবেগ অনুভব করে এবং এককেন্দ্রিক গুরুত্বকে আপন করে নিয়ে প্রত্যাশিত ভুমিকা পালন করতে থাকে। সমস্যাটা হয় বিয়ে হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পরে, যখন আকর্ষণটা কাটতে আরম্ভ করে কেননা মানব সম্প্রদায়ের জন্য যে কোন আকর্ষণের উপযোগ তার যোগানের পরিমাণের সাথে বিপরীত মুখী সম্পর্ক বজায় রাখে। অবশ্য একদম প্রগৈতিহাসিক সময়কাল থেকেই মানব সম্প্রদায়ের পুরুষ সদস্যদের প্রধান ভুমিকা ছিল খাদ্য সংগ্রহ এবং নিজের ...