"আমি
আমার যৌবনে হন্টন পীরের মতো একজনকে পেয়েছিলাম। আমরা দল বেঁধে তাঁর পেছনে
হাঁটতাম। তিনি যদি কিছু বলতেন মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। গভীর রাতে নীলক্ষেত এলাকায়
হাঁটতে হাঁটতে আবেগ অধীর হয়ে দুই হাত তুলে চিৎকার করতেন, "আমার বাংলাদেশ।
আমার বাংলাদেশ।" আমরা গভীর মুগ্ধতায় তাঁর আবেগ এবং উচ্ছ্বাস দেখতাম। তাঁর
নাম আহমদ ছফা। আমাদের সবার ছফা ভাই।" (আহমদ,২০০৯ সংগৃহীত; খান, ২০১৮)
স্বাধীনতার ৪৭ বছর শেষে একটা বড়সড় গোলমাল হয়ে গেছে। এ দেশের জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা (Nationalism) ১ম এবং ২য় জেনারেশনের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। তারই সূত্র ধরে এ দেশের নতুন Millennials (৩য় জেনারেশন) নব্য সাম্রাজ্যবাদ এবং স্বাধীনতা ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা হ য ব র ল পাকিয়ে ফেলেছে। Y generation এর কাছে জাতীয়তাবাদ এখন শুধু নেতিবাচক দিকই নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের একটি রাজনৈতিক মাধ্যম বিশেষ যাকে সকাল বিকাল গালি না দিলে নিজের জাতের উন্নয়ন সাধিত হয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁরা যে আদর্শ জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমের আশাবাদ ব্যক্ত করে তা শুধু ইউটোপিয়ান-ই নয়, পৃথিবীর গত ৪০০ বছরের ইতিহাসে তাঁর কোন নজির নেই। আদর্শ জাতীয়তাবাদের যে মহান গল্প অল্প বিস্তার ঘাটলে খুঁজে পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ইতিহাস বিকৃতির ফসল। কেননা, বিধাতা ইতিহাস বদলাতে পারেন না কিন্তু ইতিহাসবিদ তা পারেন! কিন্তু শিক্ষিত মিলেনিয়ালদের এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না। কেননা তাদেরকে তাদের প্রেক্ষাপট থেকে (তা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন), কেউ আকৃষ্ট করতে পারেনি নির্মোহ ভাবে যার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত মিলেনিয়ালদের আশা আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। যার ফলাফল তাঁরা রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে গত ২০ বছরে।
এ দেশের ভবিষ্যৎ এ-সময়ের মিলেনিয়াল এবং Z জেনারেশন। Z জেনারেশন এখন ইন্সটেগ্রাম জেনারেশন। তাঁরা জানেও না কি হচ্ছে এ দেশে এবং জানতে চাইও না। অপরদিকে যারা মিলেনিয়াল বা Y generation, তারা নিরপক্ষ প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং কিছুক্ষেত্রে তাদের ক্রোধ ভয়াবহ ভাবে জ্বলন্ত কয়লা স্তূপের মতো জমে আছে। এটি একটি দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা এবং এর সমাধান সরকারকেই করতে হবে। ১৯৬২ সালের ফ্রেঞ্চ প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি একটি জেনারেশন কিভাবে একটি দেশের নির্বাহী ব্যবস্থা পরিবর্তিত করে ফেলতে পারে। লিডারশীপ প্যানেলে কিছু আইকনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যারা এদেশের মিলেনিয়ালদের সাথে ইমোশনাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। কাগজ কলমের হিসাবে কেউই পারফেক্ট নয়। মনে রাখা প্রয়োজন এ দেশে এখনও ৭১ বিরোধী এনটিটি কাজ করে। যার প্রমাণ ৭৫-৯০। তাঁর পরবর্তী সমস্যাগুলোও সম্ভব হয়েছে গণতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে। শুদ্ধ গনতন্ত্র চর্চার সে সমস্যা সম্পর্কে খোদ গণতন্ত্রের আবিষ্কারক মার্কিন সাম্রাজ্য ওয়াকিবহাল ছিল তাই তাদের নির্বাচন পদ্ধতিতে এতো প্যাচ, ভারতবর্ষ ছিল না। যদিও পুতিন সাহেব সেই সিস্টেম হ্যাক করে দেখিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬ সালে ডাটা মাইনিং এবং Artifical Inteligence দিয়ে কিভাবে ৩৫ কোটি মানুষকে ঘোল খাওয়ানো যায়। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
এ দেশকে ঠিক করতে হলে, শুদ্ধ ভাবে বলতে গেলে আমাদেরকে সারভাইভ করতে হলে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সমধান করতে হবে। একদিনে হবে না, রেভুলিউসন অনেক আকর্ষণীয় শোনালেও তা সমস্যাকে আরও বর্ধিত করবে কেননা প্রধান সমস্যা আমরা নিজেরাই, ১৮ কোটি মানুষ ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের ভেতরে আবদ্ধ! ব্যাপারটি হোটেল ক্যালিফোর্নিয়ার সেই লিরিক্সের মতো,
হুমায়ুন আজাদ তাঁর ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইতে তৎকালীন বাংলাদেশের (২০০৩) যাবতীয় রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে হাহাকার করেছেন। যাদের হাহাকার পছন্দ তারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন। হাহাকার করার যথেষ্ট কারণ ছিল না এটা বলা ভুল হবে।তবে শুধু হাহাকার করলেই নয়, সম্ভাব্য সমাধানও আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।সমস্যার বেড়াজাল থেকে বের হওয়া একদিনে সম্ভব নয়। এটি সম্ভব হবে কয়েক প্রজন্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে। এবং এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একত্রিত করতে প্রয়োজন হবে কিছু দলনেতা যাদের মুগ্ধ করার প্রবল ক্ষমতা আছে, আছে একত্রিত করার আধিপত্য। তাঁরই সূত্রপাত হচ্ছে এই মুহূর্তে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। কিন্তু ওয়াল্টার লিপম্যান এর ভাষায় একত্রিত অবস্থায় দ্বিমত প্রেষণ করার অধিকার এবং দ্বিমতকে সম্মান করার পরিবেশও গড়ে তুলতে হবে তা না হলে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা শেষ হয়ে যাবে (দেখুনঃ The Indespensable Opinion, 1939)। এই চর্চার বড়ই অভাব এদেশে। মানুষ দ্বিমত নিতে পারে না, দ্বিমত থেকে শিখতে পারে না, কেননা আমাদের গায়ের চামড়া বড়ই পাতলা, একটু চিমটি কাটলে শরীরে লাগে, বড় জ্বালা করে! এই শিক্ষা আমরা সর্বত্রই পাই, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মস্থল। যার ফলাফল শেষ পর্যন্ত ঠেকে ‘পোলারাইজেসনে’। এ চর্চা বড়ই হতাশাব্যঞ্জক, ইংরেজিতে যাকে বলে Lugubrious! সব শেষে প্লেটোর সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই,
আমরা আবার সেই বাংলাদেশকে চাই, যেখানে নীলক্ষেতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছফা সাহেবের মতো কিছু মানুষ পাগলামি করে চিৎকার করবে গভীর রাতে, "আমার বাংলাদেশ। আমার বাংলাদেশ" আর আমরা মুগ্ধ হয়ে সেই পাগলামি দেখব। এই পাগলামির প্রয়োজন আছে, কেননা আমরা মুগ্ধ হতে দিন দিন ভুলে যাচ্ছি।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর শেষে একটা বড়সড় গোলমাল হয়ে গেছে। এ দেশের জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা (Nationalism) ১ম এবং ২য় জেনারেশনের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। তারই সূত্র ধরে এ দেশের নতুন Millennials (৩য় জেনারেশন) নব্য সাম্রাজ্যবাদ এবং স্বাধীনতা ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা হ য ব র ল পাকিয়ে ফেলেছে। Y generation এর কাছে জাতীয়তাবাদ এখন শুধু নেতিবাচক দিকই নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের একটি রাজনৈতিক মাধ্যম বিশেষ যাকে সকাল বিকাল গালি না দিলে নিজের জাতের উন্নয়ন সাধিত হয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁরা যে আদর্শ জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমের আশাবাদ ব্যক্ত করে তা শুধু ইউটোপিয়ান-ই নয়, পৃথিবীর গত ৪০০ বছরের ইতিহাসে তাঁর কোন নজির নেই। আদর্শ জাতীয়তাবাদের যে মহান গল্প অল্প বিস্তার ঘাটলে খুঁজে পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ইতিহাস বিকৃতির ফসল। কেননা, বিধাতা ইতিহাস বদলাতে পারেন না কিন্তু ইতিহাসবিদ তা পারেন! কিন্তু শিক্ষিত মিলেনিয়ালদের এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না। কেননা তাদেরকে তাদের প্রেক্ষাপট থেকে (তা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন), কেউ আকৃষ্ট করতে পারেনি নির্মোহ ভাবে যার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত মিলেনিয়ালদের আশা আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। যার ফলাফল তাঁরা রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে গত ২০ বছরে।
এ দেশের ভবিষ্যৎ এ-সময়ের মিলেনিয়াল এবং Z জেনারেশন। Z জেনারেশন এখন ইন্সটেগ্রাম জেনারেশন। তাঁরা জানেও না কি হচ্ছে এ দেশে এবং জানতে চাইও না। অপরদিকে যারা মিলেনিয়াল বা Y generation, তারা নিরপক্ষ প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং কিছুক্ষেত্রে তাদের ক্রোধ ভয়াবহ ভাবে জ্বলন্ত কয়লা স্তূপের মতো জমে আছে। এটি একটি দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা এবং এর সমাধান সরকারকেই করতে হবে। ১৯৬২ সালের ফ্রেঞ্চ প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি একটি জেনারেশন কিভাবে একটি দেশের নির্বাহী ব্যবস্থা পরিবর্তিত করে ফেলতে পারে। লিডারশীপ প্যানেলে কিছু আইকনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যারা এদেশের মিলেনিয়ালদের সাথে ইমোশনাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। কাগজ কলমের হিসাবে কেউই পারফেক্ট নয়। মনে রাখা প্রয়োজন এ দেশে এখনও ৭১ বিরোধী এনটিটি কাজ করে। যার প্রমাণ ৭৫-৯০। তাঁর পরবর্তী সমস্যাগুলোও সম্ভব হয়েছে গণতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে। শুদ্ধ গনতন্ত্র চর্চার সে সমস্যা সম্পর্কে খোদ গণতন্ত্রের আবিষ্কারক মার্কিন সাম্রাজ্য ওয়াকিবহাল ছিল তাই তাদের নির্বাচন পদ্ধতিতে এতো প্যাচ, ভারতবর্ষ ছিল না। যদিও পুতিন সাহেব সেই সিস্টেম হ্যাক করে দেখিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬ সালে ডাটা মাইনিং এবং Artifical Inteligence দিয়ে কিভাবে ৩৫ কোটি মানুষকে ঘোল খাওয়ানো যায়। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
এ দেশকে ঠিক করতে হলে, শুদ্ধ ভাবে বলতে গেলে আমাদেরকে সারভাইভ করতে হলে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সমধান করতে হবে। একদিনে হবে না, রেভুলিউসন অনেক আকর্ষণীয় শোনালেও তা সমস্যাকে আরও বর্ধিত করবে কেননা প্রধান সমস্যা আমরা নিজেরাই, ১৮ কোটি মানুষ ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের ভেতরে আবদ্ধ! ব্যাপারটি হোটেল ক্যালিফোর্নিয়ার সেই লিরিক্সের মতো,
Relax' said the night man,
'We are programmed to receive.
You can check out any time you like,
But you can never leave!'
হুমায়ুন আজাদ তাঁর ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইতে তৎকালীন বাংলাদেশের (২০০৩) যাবতীয় রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে হাহাকার করেছেন। যাদের হাহাকার পছন্দ তারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন। হাহাকার করার যথেষ্ট কারণ ছিল না এটা বলা ভুল হবে।তবে শুধু হাহাকার করলেই নয়, সম্ভাব্য সমাধানও আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।সমস্যার বেড়াজাল থেকে বের হওয়া একদিনে সম্ভব নয়। এটি সম্ভব হবে কয়েক প্রজন্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে। এবং এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একত্রিত করতে প্রয়োজন হবে কিছু দলনেতা যাদের মুগ্ধ করার প্রবল ক্ষমতা আছে, আছে একত্রিত করার আধিপত্য। তাঁরই সূত্রপাত হচ্ছে এই মুহূর্তে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। কিন্তু ওয়াল্টার লিপম্যান এর ভাষায় একত্রিত অবস্থায় দ্বিমত প্রেষণ করার অধিকার এবং দ্বিমতকে সম্মান করার পরিবেশও গড়ে তুলতে হবে তা না হলে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা শেষ হয়ে যাবে (দেখুনঃ The Indespensable Opinion, 1939)। এই চর্চার বড়ই অভাব এদেশে। মানুষ দ্বিমত নিতে পারে না, দ্বিমত থেকে শিখতে পারে না, কেননা আমাদের গায়ের চামড়া বড়ই পাতলা, একটু চিমটি কাটলে শরীরে লাগে, বড় জ্বালা করে! এই শিক্ষা আমরা সর্বত্রই পাই, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মস্থল। যার ফলাফল শেষ পর্যন্ত ঠেকে ‘পোলারাইজেসনে’। এ চর্চা বড়ই হতাশাব্যঞ্জক, ইংরেজিতে যাকে বলে Lugubrious! সব শেষে প্লেটোর সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই,
"One of the penalties
for refusing to participate in politics is that you end up being
governed by your inferiors."_The Republic 1, 381 BC.
আমরা আবার সেই বাংলাদেশকে চাই, যেখানে নীলক্ষেতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছফা সাহেবের মতো কিছু মানুষ পাগলামি করে চিৎকার করবে গভীর রাতে, "আমার বাংলাদেশ। আমার বাংলাদেশ" আর আমরা মুগ্ধ হয়ে সেই পাগলামি দেখব। এই পাগলামির প্রয়োজন আছে, কেননা আমরা মুগ্ধ হতে দিন দিন ভুলে যাচ্ছি।
Comments
Post a Comment